বই-সই সমিতির চতুর্থ অধিবেশন

বই-সই সমিতির চতুর্থ বই-কথার আস বসেছিল ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ বিকেল দুটো পনেরো মিনিটে, ডঃ বি.সি. রায় মেমোরিয়াল হলে (অডিটোরিয়ামে)। এদিনের সভার বিশেষত্ব ছিল চার রকম চারটি বইয়ের ওপর আধারিত বই-কথা। চারজন বক্তাই ছাত্রী এবং সবাই ইংরেজি বিভাগের। এবং আরেকটি উল্লেখ্য ব্যাপার হল, এই প্রথমবার বই-সই সমিতির সভা বসেছিল অডিটোরিয়াম হলে, যা সমিতির পক্ষে অবশ্যই একটি মনে রাখার মতো ঘটনা। শুধু তাই নয়, এদিনের সভার সঞ্চালনার দায়িত্বও ছিল একজন ছাত্রী, ইংরেজি বিভাগের অঙ্কিতা সামন্তর (Ankita Samanta) ওপর। বলা চলে এদিনের সভা ছিল ইংরেজি বিভাগের জন্য একটি ‘স্পেশাল’ সভা। 







অনুষ্ঠান শুরু হয় গ্রন্থাগারিকের অবতরণিকার মাধ্যমে। তারপরে স্বাগত ভাষণ দেন অধ্যক্ষ শ্রীমতী জয়শ্রী লাহা। তিনি সংক্ষেপে বলেন বই পড়ার আনন্দের কথা। স্বাগত ভাষণের পর সুন্দর একটি ভুমিকা সহকারে মূল পর্বের অনুষ্ঠান শুরু করে অঙ্কিতা।






প্রথম বই-কথাটি ছিল একটি ইংরেজি বইয়ের ওপর। আফগান-আমেরিকান লেখক Khaled Hosseini-র “The Kite Runner”. বইটির পটভূমি অনতিঅতীতের আফগানিস্তান। সেদেশে রুশ দখলদারি থেকে তালিবানি শাসন অবধি কাহিনির সময়সীমা। এককথায় একটি আন্তর্জাতিক বিষয়ের বই। অসামান্য দক্ষতায় খুব অল্প কথাতেই বইটি সম্পর্কে শ্রোতাদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে পেরেছিল ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মৌলি মাইতি (Mouli Maity)। বইটির ঘটনাবলি যেন ছবির মতো ফুটে উঠছিল মৌলির কথিকার বাক্যে বাক্যে।









ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অম্বিকা বেরা (Ambika Bera) দ্বিতীয় বই-কথাটি বলে সুচিত্রা ভট্টাচার্যর জনপ্রিয় উপন্যাস “অন্য বসন্ত” নিয়ে। অন্যরকম প্রেম নিয়ে লেখা উপন্যাসের ওপর অম্বিকার কথিকাটিও ছিল একেবারে অন্যরকম। উপন্যাসের কাহিনির একটি স্পষ্ট রেখাচিত্র ফুটে উঠেছিল অম্বিকার কথায় কথায়।




সমরেশ মজুমদারের কালজয়ী উপন্যাস “কালবেলা” ছিল ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পূর্বা হাজরার (Purba Hajra) কথিকার বিষয়। পূর্বা অত্যন্ত মুনশিয়ানার সঙ্গে রাজনৈতিক রচনাটির ওপর আলোকপাত করেছিল। মাত্র পনেরো মিনিটের কথিকাটি ছিল প্রাঞ্জল ও উপভোগ্য। কাহিনি অংশের পাশাপাশি তৎকালীন রাজনীতির রূপরেখাও সুন্দর ভাবে উঠে এসেছিল পূর্বার বক্তব্যে।



এদিনের শেষ বই-কথাটি ছিল একটি না-কাহিনিমূলক বইয়ের ওপর। বক্তা - ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অনুষ্কা মণ্ডল (Anushka Mondal), বই - Dr. Joseph Murphy-র “Power of Your Subconscious Mind”. শ্রোতাদের মতে অনুষ্কার কথিকা ছিল এদিনের সবচেয়ে মন ছুঁয়ে যাওয়া বক্তব্য। তিনটি ফিকশনের আলোচনার পর একটি নন-ফিকশন নিয়ে বলা মোটেই সহজ কাজ নয়। কিন্তু সে-কাজ সহজ ভাবেই করে দেখিয়েছে অনুষ্কা। কথিকার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার শান্ত ও সংহত ভাব দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল দর্শকদের। একটি মনোবিজ্ঞানের বই নিয়ে বলা কথিকাটি প্রকৃত অর্থেই জুগিয়েছিল মনের খোরাক।





এদিনের বই-কথার অনুষ্ঠানটিকে এক বিশেষ মাত্রা দিয়েছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। বিশেষত, পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক অর্জুন মুখোপাধ্যায়ের (Arjun Mukhopadhyay) প্রশ্ন এবং বক্তাদের উত্তর সভাটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছিল।

চারটি বই-কথার শেষে ছিল অধ্যাপক বিভাস চন্দের (Bibhas Chand) মূল্যবান সংযোজন। তিনি বলেন মুদ্রিত বইয়ের ঐতিহ্য ও জনপ্রিয়তার কথা। ছাত্রীরা যে এই প্রযুক্তি-শাসিত সময়েও বই পড়ছে, বই নিয়ে আলোচনা করছে এতেই তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।




গ্রন্থাগারিকের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। পরবর্তী বই-কথার আসর বসবে আগামী নভেম্বরে।




Comments

Popular posts from this blog

A Magical World